আপনি কি জানেন বিয়ের আগে থ্যালাসেমিয়া পরিক্ষা করা জরুরি | APF Blood Donation


Riduwan Hossain - প্রিন্ট সংস্করণ - আপডেট - ১৫ মার্চ, ২০২৫ ১০:১৬
আপনি কি জানেন বিয়ের আগে থ্যালাসেমিয়া পরিক্ষা করা জরুরি | APF Blood Donation

আপনি কি জানেন বিয়ের আগে থ্যালাসেমিয়া পরিক্ষা করা জরুরি, যদি জানা না থাকে তাহলে জেনে নিন

বিয়ের আগে থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষা করা জরুরি কেন?

থ্যালাসেমিয়া একটি বংশগত রক্তস্বল্পতাজনিত রোগ যা বাবা-মায়ের জিনের মাধ্যমে সন্তানের মধ্যে ছড়ায়। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে পর্যাপ্ত হিমোগ্লোবিন তৈরি হয় না, ফলে রক্তের লোহিত কণিকা স্বাভাবিকভাবে কাজ করতে পারে না। এটি গুরুতর শারীরিক জটিলতা সৃষ্টি করতে পারে এবং আক্রান্ত ব্যক্তির আজীবন রক্ত গ্রহণের প্রয়োজন হতে পারে। তাই বিয়ের আগে এই রোগের পরীক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যাতে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে এই রোগ থেকে রক্ষা করা যায়।

থ্যালাসেমিয়া কী?

থ্যালাসেমিয়া মূলত দুটি প্রকারের হতে পারে:

১. থ্যালাসেমিয়া মাইনর (Carrier বা বাহক)

  • একজন ব্যক্তি যদি থ্যালাসেমিয়ার বাহক হন, তবে সাধারণত তার কোনো শারীরিক সমস্যা হয় না।
  • বাহক ব্যক্তি সুস্থ থাকেন, তবে বিয়ে করার সময় বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।

২. থ্যালাসেমিয়া মেজর (গুরুতর রোগী)

  • যদি স্বামী-স্ত্রী উভয়েই থ্যালাসেমিয়ার বাহক হন, তাহলে তাদের সন্তান থ্যালাসেমিয়া মেজর হতে পারে।
  • থ্যালাসেমিয়া মেজর আক্রান্ত শিশু জন্মের কয়েক মাস পর থেকেই তীব্র রক্তস্বল্পতায় ভোগে এবং আজীবন রক্ত নিতে হয়।
  • চিকিৎসার অভাবে শিশুর বয়স কমে যেতে পারে এবং শারীরিক গঠনে ত্রুটি দেখা দিতে পারে।

বিয়ের আগে থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষা করা কেন জরুরি?

১. ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে রক্ষা করা

থ্যালাসেমিয়া একটি বংশগত রোগ, তাই এটি প্রতিরোধের একমাত্র উপায় হলো পরীক্ষা করে বাহক শনাক্ত করা। যদি দুইজনই বাহক হন, তাহলে ভবিষ্যতে সন্তান থ্যালাসেমিয়া মেজর হতে পারে।

২. থ্যালাসেমিয়া বাহকের মধ্যে বিয়ে হলে কী হয়?

যদি স্বামী-স্ত্রী উভয়েই থ্যালাসেমিয়ার বাহক হন, তাহলে সন্তান হওয়ার সম্ভাবনা নিচের চিত্র অনুযায়ী হতে পারে:

বাবা-মা সন্তানের সম্ভাব্য অবস্থা
দুইজনই বাহক ২৫% মেজর, ৫০% বাহক, ২৫% সুস্থ
শুধু একজন বাহক ৫০% বাহক, ৫০% সুস্থ
কেউই বাহক নয় ১০০% সুস্থ

৩. ভবিষ্যৎ দাম্পত্য জীবন ও সন্তানের স্বাস্থ্য রক্ষা

  • থ্যালাসেমিয়া মেজর রোগীদের প্রতি ২-৪ সপ্তাহ পরপর রক্ত নিতে হয়, যা অনেক কষ্টদায়ক।
  • চিকিৎসার জন্য ব্যয়বহুল ও দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা প্রয়োজন হয়, যা পরিবার ও সন্তানের জন্য মানসিক ও অর্থনৈতিক চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
  • তাই বিয়ের আগে পরীক্ষা করিয়ে নিশ্চিত হওয়া গুরুত্বপূর্ণ।

থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষা কীভাবে করা হয়?

থ্যালাসেমিয়া শনাক্ত করার জন্য দুইটি প্রধান পরীক্ষা রয়েছে:

১. সম্পূর্ণ রক্ত পরীক্ষা (CBC – Complete Blood Count):

  • এই পরীক্ষায় হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ ও লোহিত রক্তকণিকার আকার দেখে বোঝা যায় কেউ থ্যালাসেমিয়ার বাহক কিনা।
  • যদি হিমোগ্লোবিন বা রক্তকণিকার আকার অস্বাভাবিক হয়, তবে আরও পরীক্ষার প্রয়োজন হতে পারে।

২. হিমোগ্লোবিন ইলেকট্রোফোরেসিস (Hemoglobin Electrophoresis):

  • এই পরীক্ষায় হিমোগ্লোবিনের ধরন ও পরিমাণ বিশ্লেষণ করা হয়।
  • থ্যালাসেমিয়া বাহক হলে হিমোগ্লোবিন এ২ (HbA2) বা হিমোগ্লোবিন এফ (HbF) এর পরিমাণ বৃদ্ধি পায়।
  • এই পরীক্ষায় নির্ভুলভাবে বোঝা যায় কেউ বাহক কিনা।

থ্যালাসেমিয়া হলে কী করা উচিত?

✅ বিয়ের আগে পরীক্ষা করুন

  • যেকোনো রক্ত পরীক্ষার ল্যাবে গিয়ে থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষা করানো যায়।
  • যদি পরীক্ষার মাধ্যমে বাহক ধরা পড়ে, তবে ভবিষ্যৎ জীবন নিয়ে আগেভাগেই পরিকল্পনা করা যায়।

✅ যদি উভয়েই বাহক হন, তাহলে কী করবেন?

  • চিকিৎসকদের পরামর্শ নিন।
  • সন্তান নেওয়ার আগে জেনেটিক কাউন্সেলিং করা যেতে পারে।
  • কিছু ক্ষেত্রে আইভিএফ (In Vitro Fertilization) ও জেনেটিক স্ক্রিনিং ব্যবহার করে সুস্থ সন্তানের জন্ম দেওয়া সম্ভব।

থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধযোগ্য, তবে এর জন্য সচেতনতা ও আগেভাগে পরীক্ষা করানো প্রয়োজন। যেহেতু এটি একটি বংশগত রোগ, তাই বিয়ের আগে পরীক্ষার মাধ্যমে নিশ্চিত হওয়া যায় ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এই রোগ থেকে মুক্ত থাকবে কিনা।

আপনার সামান্য সচেতনতাই একটি সুস্থ ও সুন্দর ভবিষ্যৎ গড়ে তুলতে পারে। তাই বিয়ের আগে থ্যালাসেমিয়া পরীক্ষা করান ও অন্যদেরও উৎসাহিত করুন।

শেয়ার করুন :